মহালয়া তারিখ – ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার, বাংলা ৮ ই আশ্বিন। সময় – ২ টা ৫৫ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে পরের দিন রাত্রি ৩ টা ২৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড পর্যন্তর্য অমাবস্যা থাকবে। এই সময়কালেই মহালয়ার তর্পণর্প অনুষ্ঠিত হবে। ⇒ মহাপঞ্চমী শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, বাংলা ১৩ ই আশ্বিন। ⇒ মহাষষ্ঠী তারিখ – শনিবার ১ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ১৪ ই আশ্বিন। সময় – ৮ টা ৩৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত। ⇒ মহাসপ্তমী তারিখ – রবিবার ২ অক্টোবর, বাংলা ১৫ ই আশ্বিন। সময় – রাত্রি ৬ টা ২১ মিনিট ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত। ⇒ মহাঅষ্টমী তারিখ – সোমবার ৩ অক্টোবর ২০২২ , বাংলা ১৬ ই আশ্বিন। সময় – দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । সন্ধিপূজাঃ দিন ৩ টা ৩৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে দিন ৪ টা ২৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । ⇒ মহানবমী তারিখ – ৪ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ১৭ ই আশ্বিন। সময় – দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । ⇒ মহাদশমী তারিখ – বুধবার ৫ অক্টোবর, বাংলা ১৮ ই আশ্বিন। সময় – দিন ১১ টা ১০ মিনিট ৭ সেকেন্ড পর্যন্তর্য ।

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সেকালের জমিদার বাড়ির দূর্গা পূজা

 সেকালের জমিদার বাড়ির দূর্গা পূজা

-শুভ জিত দত্ত


বাংলার জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব ছিল না, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করত। জমিদারগণ ছিলেন বাংলার কৃষি, প্রশাসন, ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু, আর তাদের দুর্গাপূজা ছিল ঐশ্বর্য ও ক্ষমতার এক বিশাল প্রদর্শনী। মূলত, জমিদারদের পূজা শুধু দেবী দুর্গার আরাধনা নয়, বরং তাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও প্রভাবের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
দুর্গাপূজার প্রস্তুতি জমিদার বাড়িতে মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত। প্রতিমা তৈরির জন্য কারিগরদের নিয়ে আসা থেকে শুরু করে , আর দেবীর মূর্তি বিশাল ও আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হতো। মূর্তির সৌন্দর্য ও বিশালত্ব ছিল জমিদারের আভিজাত্য এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। এই পূজা উপলক্ষে সারাদেশ থেকে শিল্পী, কারিগর, এবং পূজার সামগ্রী সংগ্রহ করা হত। জমিদার বাড়ির বড় দালান, পাটকেল ঘর বা নাটমন্দিরে প্রতিমা স্থাপন করা হতো, যা স্থানীয় জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকত।
দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতো মহালয়া থেকে। চণ্ডীপাঠ, আরতি, এবং অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান জমিদার বাড়ির পুরোহিতরা সম্পন্ন করতেন। প্রতিদিনের পূজায় বিপুল সংখ্যক ভক্ত উপস্থিত থাকত, এবং জমিদারদের রাজকীয় সব আয়োজন এর মধ্যে দিয়ে। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণ ছিল সজ্জিত ও উৎসবমুখর।
বিভিন্ন নাটক, যাত্রা, ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হতো। এই পূজার মাধ্যমে জমিদারেরা তাদের প্রজা ও আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে এক ধরনের সামাজিক বন্ধন তৈরি হতো। এক্ষেত্রে পূজার ভোগ বিলি এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের অংশগ্রহণ এক ধরনের সাম্যবাদের ইঙ্গিত বহন করতে লক্ষ্য করা যায়।

জমিদাররা দুর্গাপূজার মাধ্যমে শুধু ধর্মীয় দিক নয়, তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও বিস্তার করতেন। ব্রিটিশ আমলে জমিদাররা ইংরেজদের আনুকূল্য লাভের জন্য বড়ো আকারের পূজা আয়োজন করতেন, যেখানে ইংরেজ শাসক বা উচ্চপদস্থ কর্মচারীরাও আমন্ত্রিত হতেন। তাদের উপস্থিতি জমিদারদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হত। অন্যদিকে, পূজার মাধ্যমে জমিদারগণ তাদের প্রজাদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও চালাতেন।
পূজা শেষে বিসর্জনের দিনটিও ছিল জমিদার বাড়ির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূমধাম করে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হত, এবং এই বিসর্জন অনুষ্ঠান ছিল এক ধরনের সামাজিক মিলনমেলা। প্রজারা জমিদারের প্রতি তাদের ভক্তি ও আনুগত্য প্রকাশ করত, এবং এক ধরনের পারিবারিক বন্ধনের মতো সম্পর্ক গড়ে উঠত।
জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা একদিকে যেমন ধর্মীয় আচার, তেমনই তা ছিল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক এক বিশাল আয়োজন। সময়ের সাথে জমিদার প্রথার অবসান ঘটলেও, তাদের পূজা আয়োজনের ঐতিহ্য আজও অনেক জায়গায় জীবিত আছে।
দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল বিজয়া দশমী। এই দিনটি ছিল দেবী দুর্গার বিসর্জনের দিন। বিসর্জন প্রক্রিয়াটি বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পরিচালিত হত, যেখানে জমিদার এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নিতেন। প্রচুর বাজনা, ঢাক, কাঁসা ও শঙ্খধ্বনির মধ্যে দেবীকে গঙ্গা বা নিকটস্থ পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হত। এই সময়ে প্রজাদের মনেও জমিদারদের প্রতি ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পেত, এবং জমিদারদের সেবার প্রতীক হিসেবে তাদের দিকে উপহার ও শুভেচ্ছা প্রদান করা হতদুর্গাপূজা ছিল জমিদারগণের সামাজিক ক্ষমতা জাহির করার একটি মাধ্যম। এই উৎসবের মাধ্যমে জমিদারগণ নিজেদের আধিপত্য ও প্রভাবকে মজবুত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেদের মর্যাদা বাড়াতেন। প্রজারা জমিদারদের এই আয়োজনকে সম্মানের চোখে দেখত, এবং পূজার সময় প্রজাদের প্রতি জমিদারদের উদারতা তাদের অনুগত রাখার কৌশল হিসেবেও কাজ করত।সেকালের জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসবই ছিল না, এটি বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জমিদারগণ পূজার মাধ্যমে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করতেন। যদিও আজকের দিনে জমিদার প্রথার অবসান ঘটেছে, তবে তাদের এই ঐতিহ্যবাহী পূজা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অঙ্গ হিসেবে এখনও অনেক জায়গায় বিদ্যমান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন