মহালয়া তারিখ – ২৫ সেপ্টেম্বর রবিবার, বাংলা ৮ ই আশ্বিন। সময় – ২ টা ৫৫ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে পরের দিন রাত্রি ৩ টা ২৪ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড পর্যন্তর্য অমাবস্যা থাকবে। এই সময়কালেই মহালয়ার তর্পণর্প অনুষ্ঠিত হবে। ⇒ মহাপঞ্চমী শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, বাংলা ১৩ ই আশ্বিন। ⇒ মহাষষ্ঠী তারিখ – শনিবার ১ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ১৪ ই আশ্বিন। সময় – ৮ টা ৩৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত। ⇒ মহাসপ্তমী তারিখ – রবিবার ২ অক্টোবর, বাংলা ১৫ ই আশ্বিন। সময় – রাত্রি ৬ টা ২১ মিনিট ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত। ⇒ মহাঅষ্টমী তারিখ – সোমবার ৩ অক্টোবর ২০২২ , বাংলা ১৬ ই আশ্বিন। সময় – দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । সন্ধিপূজাঃ দিন ৩ টা ৩৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ড থেকে দিন ৪ টা ২৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । ⇒ মহানবমী তারিখ – ৪ অক্টোবর ২০২২, বাংলা ১৭ ই আশ্বিন। সময় – দিন ৩ টা ৫৯ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্তর্য । ⇒ মহাদশমী তারিখ – বুধবার ৫ অক্টোবর, বাংলা ১৮ ই আশ্বিন। সময় – দিন ১১ টা ১০ মিনিট ৭ সেকেন্ড পর্যন্তর্য ।

সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

পুজোর একাল সেকাল

 হারিয়ে যাচ্ছে সাবেকি আনা 


একটা সময় ছিল দূর্গা পূজার সীমাবদ্ধ ছিল রাজবাড়ি ও জমিদার বাড়ির মধ্যে।দূর্গা পূজা আয়োজন করা সাধারণ মানুষের কাছে অসম্ভব ব্যাপার এটি যথেষ্ট ব্যয়বহুল ছিল। যেহেতু ধনী বনেদি পারিবারে আয়োজন করা হতো সেই কারণে এই পূজা বনেদি বাড়ির পূজা নামে পরিচিতি লাভ করে। বনেদি পরিবারের আয়োজন হওয়ার কারণে তারা যথেষ্ট ব্যয় করতো এই পাঁচ দিনের আয়োজনে এমনকি স্থানীয় প্রজাদের জন্য থাকতো খাবারের আয়োজন। তারা এই পূজা গুলোতে যথেষ্ট আচার ও নিয়ম কানুন এর মধ্য দিয়ে পালন করতো খুব নিষ্ঠার সাথে যার কারণে অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমতো তাদের এই আয়োজন দেখতে আর দেবী প্রতিমা রাখার জন্য যে একটি ঘর তৈরি হয় সেটি ঠাকুর দালান নামে পরিচিত লাভ করে। লোকমুখে প্রচলিত আছে বাংলাদেশের রাজশাহীর তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণের হাত ধরে দূর্গা পূজার সূচনা হয়। প্রচলিত আছে তিনি সেই সময়ে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই পূজার আয়োজন করে যা তৎকালীন সময়ে সব থেকে বড় আয়োজন ছিল সময় টা ছিল ষোড়শ শতকের যতটুক লোক মুখে শোনা যায়।তার অনেক পরে যখন সকলে উপলদ্ধি করলো এটা কেন শুধু তাদের অধীনে থাকবে তখন বারো জন ব্রাহ্মণ বন্ধু মিলে ১৭৯০ সালের দিকে হুগলির জেলার গুপ্তি পাড়ায় দূর্গা পূজার জন্য চাঁদা তুলে ৪০০টাকা দিয়ে সর্বজনীনভাবে করার সিদ্ধান্ত নেয় তখন থেকেই এটা বারোয়ারী পূজা হিসাবে প্রচলিত হয়। বারোয়ারি হচ্ছে সার্বজনীন পূজা যেটি সকলে একত্রিত হয়ে সম্মিলিত ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এই পূজার আয়োজন করতে হয়। এইভাবে মূলত বনেদি বাড়ি ছেড়ে সর্বজনীনতা লাভ করে দূর্গা পূজা। এর ফলে দেখা যায় যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুজোর সংখ্যা কমতে থাকে এর পেছনে অবশ্যই বারোয়ারী পূজার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। ভারতের শুধু পশ্চিমবাংলা না বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বর্তমানে বারোয়ারী বা সার্বজনীনভাবে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বলে রাখা ভালো বারোয়ারি পূজার জনপ্রিয়তা পাওয়ার আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে বনেদি বাড়ির পূজাগুলোতে তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের বাইরে কারো প্রবেশ বা অংশগ্রহণে তেমন সুযোগ থাকত না। সাধারণ মানুষের জন্য শুধু দুপুরের পুজোর ভোগের প্রসাদ বিতরণ করা হতো এবং দূর থেকে প্রতিমা দেখার সুযোগ হতো। মূলত এ সকল কারণে বনেদি বাড়ি ছেড়ে বারোয়ারি পূজো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। মূলত চাহিদা ও জনপ্রিয়তার কারণে বারোয়ারি পূজার গুরুত্ব বাড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। কলকাতায় ১৮৬০ সালে একটি পূজা কমিটির উদ্যোগে বারোয়ারি পূজা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে তখন থেকে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যায় এবং বিভিন্ন পূজা কমিটি গঠিত হতে থাকে। বারোয়ারি পূজাতে যথেষ্ট খরচের একটি বিষয় থাকে যেহেতু সকলে মিলে আয়োজন করে আর এই কারণে বেশ অর্থ যোগাতে হয় আর এই কারণে মূলত চাঁদার জন্য মানুষদের অনেক হয়রানির সম্মুখীন হতে হয়। তারপর শুরু হল বিভিন্ন কমিটির মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে চাঁদের পরিমাণ হারিয়ে যেতে থাকে দূর্গা পূজার পুরোনো জৌলুস বিভিন্ন থিমে। পরিবর্তন হয় দেবী প্রতিমার অবয়ব এমনকি দূর্গা পূজার প্যান্ডেলে আসে বড় ধরনের পরিবর্তন। ঢাকা পড়ে যায় সাবেকি আনা হারিয়ে যায় মায়ের পরিচিত মুখ।আগে যেখানে প্রাধান্য দেয়া হতো ভক্তিমূলক গান এবং নানা আচার আনুষ্ঠানিকতার দিকগুলো এখন প্রাধান্য দেয়া হয় হিন্দি গান । ভক্তি জায়গাটাও অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে, রাত জেগে শুধু থিম পূজা দেখা আর খাওয়া-দাওয়ার এখানেই উৎসব এর পূর্ণাঙ্গতা। ঢাকা পড়েছে মায়ের মৃণ্ময়ী রূপের প্রতিমা গড়নে মায়ের আসল রূপ খুঁজে পাওয়া যায় না মায়ের প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না সাবেকি উপাদান সমূহ বর্তমানে যা তা ব্যবহার করে মায়ের প্রতিমা নির্মাণ করা হয় এই নিয়ে অনেকে প্রতিবাদও করেছেন প্রতিমা নিয়ে এযেন ছেলে খেলা। দূর্গাপূজায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও কোথাও যেন ভাঁটা পড়েছে সাবেকি প্রতিমা চিরচেনা মায়ের মুখ ঢুকেছে অসম প্রতিযোগিতা। বিজ্ঞাপন আর বাণিজ্যিক করণ স্পনসরশিপ এর ভীরে কোথাও যেন হারিয়ে গেছে শিউলি ফুলের গন্ধ আর কাশফুলের মাঝে দোলা দিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের আহ্বান।।



লেখনী: শুভ জিত দত্ত

মহেশপুর , ঝিনাইদহ,বাংলাদেশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন